Summary
বর্তমান উন্নয়নশীল বিশ্বে ব্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম, যা অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। নিম্নে ব্যবসায়ের বিভিন্ন গুরুত্ব উল্লেখ করা হলো:
- অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
        
- অর্থনৈতিক উন্নয়ন: ব্যবসা নতুন উপযোগ সৃষ্টি করে এবং প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে।
 - শ্রমবিভাগের সুফল: ব্যবসায়িক কার্যক্রমের মাধ্যমে শ্রমবিভাগ ও বিশেষীকরণের উন্নতি ঘটে।
 - পুঁজি গঠন: ব্যবসা দেশের সঞ্চয় একত্রিত করে পুঁজি গঠনে সহায়তা করে।
 - প্রযুক্তির ব্যবহার: উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন পণ্য উৎপাদন ও অর্থনৈতিক কল্যাণের প্রসার।
 - সরকারি আয় বৃদ্ধি: ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার রাজস্ব আয় করে।
 - সম্পদের ব্যবহার: প্রাকৃতিক সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহার ব্যবসায়ের ফলশ্রুতি।
 
 - সামাজিক গুরুত্ব:
        
- মূল্যের স্থিতিশীলতা: দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
 - কর্মসংস্থান: বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী হয়।
 - পণ্য সরবরাহ: দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর জন্য মানসম্মত পণ্য সরবরাহ করে।
 - পণ্যের মান উন্নয়ন: উৎপাদিত পণ্যের মান বৃদ্ধির জন্য ব্যবসা চেষ্টা করে।
 - জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন: ব্যবসা জনগণের সুখ-সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
 - আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মধ্যে সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়।
 
 
সারসংক্ষেপে, ব্যবসায়ের কার্যক্রম ব্যক্তি, সমাজ এবং জাতীয় জীবনে অপরিহার্য, যা পণ্য ও সেবা আহরণ, উৎপাদন এবং বিতরণের সাথে জড়িত।
বর্তমান উন্নয়নশীল বিশ্বে দ্রুত অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ও পরিবর্তনের জন্য ব্যবসায়ের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা বাড়িয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশের কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য যোগাযোগ, পরিবহন প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উন্নয়নের সাথে ব্যবসায় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নিম্নে ব্যবসায়ের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা করা হলো—
ক. অর্থনৈতিক গুরুত্ব (Economic Importance):
- অর্থনৈতিক উন্নয়ন (Economic development): প্রকৃতি প্রদত্ত বিভিন্ন সম্পদ আহরণ করে ব্যবসায় শিল্পের মাধ্যমে নতুন নতুন উপযোগ সৃষ্টি করে। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে ব্যবসায় অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
 - শ্রমবিভাগের সুফল (Merits of division of labour): ব্যবসায়িক তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ার দরুন উৎপাদন ও অন্যান্য ব্যবসায়িক কর্যক্রমে শ্রমবিভাগ এবং বিশেষীকরণের উদ্ভব হয়েছে। এর ফলে শ্রম দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং পণ্যের মূল্য কম পড়ে। তাই ভোক্তারা স্বল্প ব্যয়ে পণ্য ক্রয় করে তা ভোগ করতে সক্ষম হয়।
 - পুঁজি গঠন (Formation of capital): দেশে পুঁজিগঠনের হার যত বেশি হয়, অর্থনৈতিক উন্নয়নের হারও তত বেড়ে যায়। ব্যবসায় ব্যাংকিং ব্যবস্থা, বিমা ব্যবস্থা ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের ভেতরকার বিক্ষিপ্ত সঞ্চয় একত্রিত করে পুঁজি গঠনে সহায়তা করে এবং এ পুঁজি ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যবহার করে জাতীয় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে। ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয় ।
 - প্রযুক্তির ব্যবহার ও অর্থনৈতিক কল্যাণ (Use of technology and economic welfare): ব্যবসায় উন্নত ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিত্য নতুন পণ্য উৎপাদন করে মানুষের অতৃপ্ত চাহিদাপূরণ করার প্রয়াস পায়। প্রযুক্তির উপযুক্ত ব্যবহার সমাজে মানুষের কল্যাণ বয়ে আনে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে।
 
- সরকারি আয় বৃদ্ধি (Increase of government income): ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিকট থেকে বিভিন্ন প্রকার কর ও শুল্ক বাবদ সরকার প্রচুর রাজস্ব আয় করে। এ অর্থ সরকার জনহিতকরকার্যে ব্যয় করে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তোলে ।
 - সম্পদের ব্যবহার (Use of resources): ব্যবসায়ী কার্যকলাপের মাধ্যমে দেশের ভেতরে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহার সম্ভবপর হয়। খনি থেকে সম্পদ উত্তোলন, সমুদ্র থেকে মৎস সম্পদ আহরণ, বন-জঙ্গল থেকে বনজ সম্পদ সংগ্রহ ইত্যাদি সবই ব্যবসায়ের ফলশ্রুতি।
 
খ. সামাজিক গুরুত্ব (Social Importance):
- মূল্যের স্থিতিশীলতা রক্ষা (Keeping price stability): দ্রব্যমূল্য বেশি উঠানামা করলে মানুষের জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে উঠে। তাই ব্যবসায় পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে ।
 - কর্মসংস্থান (Employment): একটি দেশে অসংখ্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রাখে। এসব প্রতিষ্ঠানে শত শত লোকের কর্মসংস্থান হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, ব্যবসায় কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতির যাত্রাপথকে নির্বিঘ্ন করার প্রয়াস চালায় ।
 - পণ্য সরবরাহ (Product supply): সমাজে বসবাসরত মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় মানসম্মত পণ্যদ্রব্য ও সেবা সরবরাহ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালিত হয় ।
 - পণ্যের মান উন্নয়ন ( Improvement of the quality of products): ব্যবসায়ের আধুনিকায়নের সাথে সাথে উৎপাদিত পণ্যের মান বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালানো হয়। নির্ধারিত পণ্য গুণে-মানে উত্তম হলে ভোগকারীরা যথেষ্ট উপকৃত হয়। ভোগকারীদের উপকার সামাজিক কল্যাণেরই নামান্তর ।
 - জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন (Improvement of standard of living): ব্যবসায় একদিকে প্রচুর পণ্যদ্রব্য যেমন উৎপাদন করে এবং অন্যদিকে এসব সামগ্রি ব্যবহারকারীর দ্বারপ্রান্তে এনে হাজির করে। এভাবে ব্যবসায় সামগ্রিকভাবে জনগণের সুখ-সমৃদ্ধি বয়ে আনে এবং এর ফলে জনগণের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটে।
 - আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (International relation): ব্যবসায় দিক-দিগন্তে এর বাহু প্রসারিত করে বিভিন্ন জাতির মধ্যে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি করে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবসায়ের একটি অঙ্গ হিসেবে বিভিন্ন দেশের মধ্যে পণ্যের লেনদেন ঘটিয়ে প্রত্যেক দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক করে ।
 
পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিক বিশ্বে মানব গোষ্ঠীর সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ ও সভ্যতার ক্রমোন্নতিতে ব্যবসায়ের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনে প্রয়োজনীয় পণ্য বা সেবা আহরণ, উৎপাদন ও বিতরণ সংক্রান্ত কার্যক্রমে ব্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
Read more